শ্বেতী বা Leucoderma রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
শ্বেতী (Leucoderma) রোগে চামড়া সাদা
হয়ে যায়। ইহাতে সর্ব প্রথম সাদা বিন্দুর ন্যায় দাগ পড়ে এবং ধীরে ধীরে অধিক স্থান
জুড়ে সাদা হয়ে যায়। চর্মের স্বাভাবিক বর্ণের ( Pigment )উপাদান
বিকৃতি বা অভাব হেতু চর্ম দুধের মত সাদা হলে তাকে শ্বেতী বা ধবল বলে।
শ্বেতী রোগের কারণসমুহ
শ্বেতী রোগের কারণ
সম্বন্ধে মতভেদ আছে। অনেক ক্ষেত্রে বংশগত কারণকে দায়ী করা হয় । চর্মের স্বাভাবিক
রঙ সৃষ্টির মূলে রয়েছে মিলানীন ( Melanin ) জাতীয় Pigment এবং ইহা চর্মের Pigment Layer এ থাকে। দেহের কিছু
অংশের Pigment নষ্ট হয়ে গেলে তার ফলে এই রোগ হয়। যদি শরীরের
সর্বত্র এইরূপ চর্মবর্ণের বিকৃতি ঘটে তবে তাকে অ্যালবিনোস ( Albinos ) বলে। অনেকের মতে লিভার দোষ হেতু।কোন কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানীর মতে লিভারের
ক্রিয়া বিকলতার জন্য পিতামাতা থেকে সন্তানদের দেহে এই রোগ সৃষ্টি হয়।
শ্বেতী রোগের লক্ষণ :-
অনেক সময় অতি সামান্য অংশে
প্রকাশ লাভ করে পড়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত রোগী রোদের তাপসহ্য
করতে পারে না,
রোদে বের হলে কষ্ট পায়। আক্রান্ত স্থানের লোমগুলো ঠিকই থাকে কিন্তু
সাদা হয়ে যায়।
স্ত্রী পুরুষ উভয়কেই
আক্রমণ করতে পারে। এই রোগে তেমন স্বাস্থ্যহানি হয় না, শুধু মাত্র চর্মের স্বাভাবিক
বর্ণ নষ্ট হয়ে যায় এবং অন্য কোন কষ্ট হয় না।
কুষ্ঠরোগের সঙ্গে ইহার কোন
সম্পর্ক নেই। কুষ্ঠের মত ইহা ধ্বংসাত্বক নয় অথবা স্পর্শ সংক্রামক নয়। দেহের যে কোন
স্থানে প্রকাশ পেতে পারে।মাথায় হলে চুলগুলো সাদা হয়ে যায়।
শ্বেতী রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা একটি
লক্ষন ভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্হা। রোগীর সার্বলাক্ষনিক বিবেচনায় সঠিক ঔষধ প্রয়োগ
করতে পারলে সহজেই নিরাময় সম্ভব। যদিও এ রোগটি আরোগ্য করা কঠিন তবুও হোমিও মতে সঠিক
সময়ে ও সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করলে আরোগ্য হয়। এ চিকিৎসা একটি প্রাকৃতিক ও পার্শ-প্রতিক্রিয়াহীণ
পদ্ধতি।যদি এ পদ্ধতিতে নিরাময় সম্ভব না হলে বুঝবেন আপনি হয় সঠিক ডাক্তারের নিকট
যাননি আথবা সঠিক ঔষধ ও নিয়ম অনুযাযী চিকিৎসিত হননি।
আর্স সাল্ফ ফ্লেবম: এই ঔষধটি শ্বেতী রোহগর
শ্রেষ্ঠ ঔষধ। শ্বেতী রোগ অল্প পরিসর স্হানে ও মাথায় হলে উপযোগী। মনে রাখতে হবে এ
ঔষধ শ্বেতী রোগের চিকিৎসা দীর্ঘদিন করতে হয়।
সিফিলিনাম: খেয়াল রাখতে হবে যে
চিকিৎসার শুরুতে এক মাত্রা 1m, 10m, cm. শক্তির সিফিলিনাম বাসি পেটে
দেয়ার ফলে রোগ আরোগ্য দ্রুত হবে।
সোরালিয়া কুরি: শ্বেতী রোগের
গুরুত্বপুর্ন ঔষধ। এটি বাহ্য প্রয়োগও হয়। পুরাতন ও যে কোন স্হানে হউক সেখানে
সোরালিয়া কোরি প্রয়োগ হয়। ৩ শক্তির বা ৬ শক্তির অথবা মাদার টিংচার প্রয়োগে রোগ
আরেগ্যে বেশী সহায়ক।
রেডিয়াম ব্রোমাইড: কোন তেজস্ক্রিয়তার কারনে
শ্বেতী রোগ হয়ে থাকলে তার জন্য উপযোগী।
চেলিডোনিয়াম: যদি রোগীর লিভার দোষ থাকে
তাকে চেলিডোনিয়াম মাদার টিংচার দিবেন।
মার্ক সল: রোগীর আমাশয় থাকলে মার্ক সল সেবন করাবেন পরে
আস্তে আস্তে উচ্চ শক্তি অগ্রসর হবেন।
এছাড়াও আর্স সাল্ফ রুব্রম, এসিড নাই, নেট্রাম কার্ব, ও সিপিয়া সুনামের সাথে ব্যবহৃত হয়।
দীর্ঘকাল স্হায়ী রোগ আরোগ্যের জন্য ড্রসেরা, সিলেনিয়াম,
ম্যাঙ্গেনাম আর্জেন্টাম ও প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বাহ্য প্রয়োগ:
শ্বেতী রোগেরে হোমিও
উপযোগী ঔষধের পাশাপাশি ওয়েল বুচি, সোরালিয়া কুরি, স্কুকুম চক বাহ্য প্রয়োগ
করিলে রোগ আরোগ্যের সহজ হয়। হোমিওপ্যাথিতে উপযুক্ত চিকিৎসা আছে।ডাঃ ডগলাস বলেন
বাহ্যিক ভাবে এসেটিক অ্যাসিড লাগালে আক্রান্ত স্থানটির চারিদিকের বর্ণ ধীরে ধীরে
স্বাভাবিক হয়ে আসে।
শ্বেতী রোগের বাইয়োকেমিক ঔষধসমুহের লক্ষণভিত্তিক আলোচনা
ফেরম ফস: চর্ম প্রদাহিত, স্হানে স্হানে রক্তাধিক্য,
চর্ম অমসৃন, উত্তাপ, দপদপানি
ব্যাথা, স্ফীত ভাব, জ্বরজ্বর ভাব,
চোখে জ্বালা, হাত ও পায়ের তালু উত্তপ্ত ।
রেগীর নিদ্রাহীনতা বিদ্যমান থাকে।
নেট্রাম সাল্ফ: ত্বকের স্হানে স্হানে
বিবর্ন ভাব্সহ পিত্ত লক্ষণ ত্বকে জ্বালাকর চুলকানি থাকলে উপযোগী।
কেলি মিউর: ত্ববের স্হানে স্হানে
চুলকানি, সাদা সাদা
গুড়া উঠে।টিকার কুফলে চর্মরোগ, জরায়ু, পাকস্হলীর
বিভিন্ন রোগ।মুখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্রুন ও আচিল থাকলে উপযোগী।
জেনে রাখা জরুরী:
যদি শরীরে ভিটামিনের অভাব
থাকে তবে সেই অনুসারে পথ্য খেতে হবে। ঘি, দুধ, ছানা, মাখন প্রভৃতি স্নেহ জাতীয় খাদ্য হিতকর। ফলের রস ও অন্যান্য পুষ্টিকর
খাদ্যও প্রয়োজন যাতে - স্নায়ুর পুষ্টিসাধন এবং রক্ত উৎপাদনের কাজ হয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস, উগ্রমসল্যা যুক্ত খাদ্য
বর্জন, ক্ষতি কর যে কোন নেশা পরিহার করতে হবে।