চর্মরোগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা- Homeopathic Treatment of skin diseases

 চর্মরোগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা- Homeopathic Treatment of skin diseases

কটি ক্লোজ-আপ শটে একজন ব্যক্তির ডান হাতের পেছনের দিক এবং আঙ্গুলগুলোতে লালচে, ফোলা এবং সামান্য উঁচু চামড়ার দাগ দেখা যাচ্ছে। আক্রান্ত স্থানগুলোতে ত্বক দেখে মনে হচ্ছে যেন চুলকাচ্ছে এবং শুষ্ক।


হোমিওপ্যাথিতে চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য আলাদা কোন শর্টকাট রাস্তা নাই। রোগের নাম নয় বরং রোগের লক্ষণ এবং রোগের কারণ অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করে প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই আরোগ্যের আশা করতে পারেন। হ্যাঁযে-কোন হোমিও ঔষধেই যে-কোন চর্মরোগ নিরাময় করা সম্ভব যদি সেই ঔষধের সাথে রোগটির লক্ষণ মিলে যায়। তারপরও নীচে কয়েকটি হোমিও ঔষধের ব্যবহার বর্ণনা করা হলো।

Thuja occidentalis: 

একটু মারাত্মক ভয়ঙ্কর ধরনের অধিকাংশ চর্মরোগের একটি মূল কারণ হলো টিকা (বিসিজিডিপিটিএটিএসপোলিওহেপাটাইটিসএটিএস ইত্যাদি) নেওয়া। কাজেই কোন টিকা নেওয়ার দুয়েক মাস থেকে দুয়েক বছরের মধ্যে কোন চর্মরোগ দেখা দিলে প্রথমেই থুজা নামক ঔষধটি উচ্চ শক্তিতে এক মাত্রা খেয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে খুসকির সাথে যাদের শরীরে আঁচিলও আছেতাদের প্রথমেই সপ্তাহে একমাত্রা করে কয়েক মাত্রা খুজা খেয়ে নেওয়া উচিত।

Arsenicum album: 

যে-কোন চর্মরোগের সাথে যদি অস্থিরতাজ্বালাপোড়াপেটের অসুখরাতের বেলা বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে আর্সেনিক খেতে হবে।

Kali sulphuricum: 

ক্যালি সালফ খুসকির মতো চামড়া ওঠা জাতীয় রোগের একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। ক্যালি সালফের আরেকটি প্রধান লক্ষণ হলো হলুদ রঙ। যদি পূজেঁর রঙপ্রস্রাবের রঙ অথবা কফের রঙ হলুদ হয়তবে যে-কোন রোগে ক্যালি সালফ প্রয়োগে ভাল ফল পাবেন।

Sepia: 

তলপেটে বল বা চাকার মতো কিছু একটা আছে মনে হয়রোগী তলপেটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাবে এই ভয়ে দুই পা দিয়ে চেপে ধরে রাখেসর্বদা শীতে কাঁপতে থাকেদুধ সহ্য হয় নাঘনঘন গর্ভপাত হয়স্বামী-সন্তান-চাকরি-বাকরির প্রতি আকর্ষণ কমে যায় ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে যে-কোন চর্মরোগে সিপিয়া খেতে পারেন।

Sulphur: 

চর্মরোগের একটি সেরা ঔষধ হলো সালফার যদি তাতে অত্যধিক চুলকানী এবং জ্বালাপোড়া থাকে। এই কারণে রোগীর মধ্যে অন্য কোন ঔষধের লক্ষণ না থাকলে অবশ্যই তার চিকিৎসা প্রথমে সালফার দিয়ে শুরু করা উচিত। যাদের চর্মরোগ বেশী বেশী হয়তাদেরকে প্রথমে অবশ্যই দুয়েক মাত্রা সালফার খাওয়াতেই হবে এবং সালফার তার ভেতর থেকে সকল চর্মরোগ বের করে আনবে। পক্ষান্তরে যাদের চর্মরোগ বেশী বেশী হয় এবং শীতকাতর তাদেরকে প্রথমে খাওয়াতে হবে সোরিনাম (Psorinum)। সালফারের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়াগোসল করা অপছন্দ করেগরম লাগে বেশীশরীরে চুলকানী বেশীহাতের তালু-পায়ের তালু-মাথার তালুতে জ্বালাপোড়ামাথা গরম কিন্তু পা ঠান্ডাপরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে কোন খেয়াল নাইরোগ বিছানার গরমে বৃদ্ধি পায়ছেড়া-নোংরা তেনা দেখেও আনন্দিত হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

Mezereum: 

মেজেরিয়ামের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো মাথার থেকে মোটা মোটা চামড়ার মতো চলটা উঠতে থাকেএগুলোর নীচে আবার পূঁজ জমে থাকেচুল আঠা দিয়ে জট লেগে থাকেপূঁজ থেকে এক সময় দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকেচুলকানীর জন্য রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় ইত্যাদি।

Graphites: 

গ্র্যাফাইটিসের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো অলসতাদিনদিন কেবল মোটা হওয়ামাসিকের রক্তক্ষরণ খুবই কম হওয়াচর্মরোগ বেশী হওয়া এবং তা থেকে মধুর মতো আঠালো তরল পদার্থ বের হওয়াঘনঘন মাথাব্যথা হওয়ানাক থেকে রক্তক্ষরণ হওয়াআলো অসহ্য লাগা ইত্যাদি। উপরের লক্ষণগুলোর দুতিনটিও যদি কোন রোগীর মধ্যে থাকেতবে গ্র্যাফাইটিস তার চর্মরোগ সারিয়ে দেবে।

Hepar sulph: 

হিপার সালফের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো এরা সাংঘাতিক সেনসেটিভ (over-sensitiveness), এতই সেনসেটিভ যে রোগাক্রান্ত স্থানে সামান্য স্পর্শও সহ্য করতে পারে নাএমনকি কাপড়ের স্পর্শও না। কেবল মানুষের বা কাপড়ের স্পর্শ নয়এমনকি ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শও সহ্য করতে পারে না। সাথে সাথে শব্দ (গোলমাল) এবং গন্ধও সহ্য করতে পারে না। হিপারের শুধু শরীরই সেনসেটিভ নয়সাথে সাথে মনও সেনসেটিভ। অর্থাৎ মেজাজ খুবই খিটখিটে। কাটা-ছেড়া-পোড়া ইত্যাদি ঘা/ক্ষত শুকাতে হিপার বেশী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে যেহিপারের পূঁজ হয় পাতলা। যেখানে আঠালো পূঁজ বা কষ বের হয়সেখানে হিপারের বদলে ক্যালি বাইক্রোম (Kali bichromicum) ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ফোড়া পাকাতে নিম্নশক্তি এবং ফোড়া সারাতে উচ্চশক্তি ব্যবহার করতে হয়।

Natrum muriaticum: 

মুখ সাদাটে এবং ফোলা ফোলাবেশী বেশী লবণ বা লবণযুক্ত খাবার খায়কথা শিখতে বা পড়াশোনা শিখতে দেরী হয়ঋতুস্রাবে রক্তক্ষরণ হয় খুবই অল্পপা মোটা কিন্তু ঘাড় চিকনমানসিক আঘাত পাওয়ার পর কোন চর্মরোগ হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে যে-কোন চর্মরোগে নেট্রাম মিউর খেতে পারেন।

Croton Tiglium: 

ক্রোটন টিগ চর্মরোগের একটি সেরা ঔষধ। ইহার প্রধান লক্ষণ হলো চর্মরোগে প্রচুর চুলকানি থাকে কিন্তু জোরে চুলকানো রোগী সহ্য করতে পারে না। কেননা তাতে আরাম না বরং সাংঘাতিক ব্যথা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে হালকা ভাবে চুলকালে অথবা মালিশ করলে রোগী আরাম পায়।

Rhus toxicodendron: 

রাস টক্সের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো প্রচণ্ড অস্থিরতারোগী এতই অস্থিরতায় ভোগে যে এক পজিশনে বেশীক্ষণ স্থির থাকতে পারে নারোগীর শীতভাব এমন বেশী যে তার মনে হয় কেউ যেন বালতি দিয়ে তার গায়ে ঠান্ডা পানি ঢালতেছেনড়াচড়া করলে (অথবা শরীর টিপে দিলে) তার ভালো লাগে অর্থাৎ রোগের কষ্ট কমে যায়স্বপ্ন দেখে যেন খুব পরিশ্রমের কাজ করতেছে। পাশের চিত্রের ন্যায় লালচে এবং ফোষ্কা জাতীয় চর্মরোগের জন্য রাসটক্স এক নাম্বার ঔষধ।

Arnica montana: 

যে-কোন ধরনের আঘাতথেতলানোমচকানোমোচড়ানোঘুষিলাঠির আঘাত বা উপর থেকে পড়ার কারণে কোন চর্মরোগ হলে আর্নিকা খেতে হবে। আক্রান্ত স্থানে এমন তীব্র ব্যথা থাকে যেরোগী কাউকে তার দিকে আসতে দেখলেই সে ভয় পেয়ে যায় (কারণ ধাক্কা লাগলে ব্যথার চোটে তার প্রাণ বেরিয়ে যাবে)। উপরের লক্ষণগুলোর কোনটি থাকলে যে-কোন রোগে আর্নিকা প্রয়োগ করতে পারেন।

Mercurius solubilis: 

মার্ক সল ঔষধটির প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু রোগী আরাম পায় নাঘামে দুর্গন্ধ বা মিষ্টি গন্ধ থাকেঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা ঝরেপায়খানা করার সময় কোথানিঅধিকাংশ রোগ রাতের বেলা বেড়ে যায়রোগী ঠান্ডা পানির জন্য পাগল ইত্যাদি। ঘামের কারণে যাদের কাপড়ে হলুদ দাগ পড়ে যায়তাদের যে-কোন রোগে মার্ক সল প্রয়োগ করতে পারেন। মার্ক সল যেহেতু এন্টি-সিফিলিটিক ঔষধ তাই সিফিলিস রোগী বা তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের যে-কোন রোগে এটি ভাল কাজ করে।

Cantharis: জ্বালা-পোড়া এবং ছিড়ে ফেলার মতো ব্যথা হলো ক্যান্থারিসের প্রধান লক্ষণ। ভীষণ জ্বালাপোড়া থাকলে যে-কোন চর্মরোগে ক্যান্থারিস ব্যবহার করতে পারেন। এটি জলাতঙ্ক রোগের একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। এটি যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে থাকে ভীষণভাবে। কোন জায়গা পুড়ে গেলে একই সাথে খাওয়ান এবং পানির সাথে মিশিয়ে পোড়া জায়গায় লাগান। এটি পেটের মরা বাচ্চাগর্ভফুল বের করে দিতে পারে এবং বন্ধ্যাত্ব নির্মূল করতে পারে।

সতর্কতাঃ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

Ads

Ads