ঋতুশূল বা বাধক বেদনা: Dysmenorrhoea

 ঋতুশূল / বাধক বেদনা (Dysmenorrhoea)

ঋতুশূল / বাধক বেদনা (Dysmenorrhoea)

কাকে বলেঃ রমণীদের রজস্রাবের বিফলতা বশত তলপেটে এবং কোমরে একপ্রকার কষ্টকর বেদনা দেখা দেয় ইহাকে ঋতুশূল বা বাধক বেদনা বলে। ইহা একপ্রকার কষ্টকর বেদনা বিশেষ ।

কারণ: জরায়ুর গ্রীবার পথের সংকোচন ও জরায়ুর নিঃসরক ধমনীতে রক্তাধিক্যতা। হিম লাগা, ঠাণ্ডা লাগা, জরায়ুর প্রদাহ, ডিম্বকোষের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, যান্ত্রিক গোলযোগ ইত্যাদি কারণে ইহা হতে পারে। যথা

(১) বাস্তু গহ্বরে অবস্থিত যন্ত্রসমূহে রক্তাধিক্য অথবা

(২) জরায়ু পেশীর অস্বাভাবিক ও প্রবল সংকোচন।

বস্তি গহ্বরস্থ যে কোন যন্ত্র যথাডিম্বকোষ জরায়ু, জরায়ু আবরণ প্রভৃতি প্রবাহিত হলেই সেখানে রক্তের সমাবেশ হয়ে বাধক বেদনার সৃষ্টি করে। ইহা ছাড়া টিউমার, আর, ক্ষত ইত্যাদি হলেও এইরূপ বেদনা দেখা দেয় । সাধারণত যে ঋতুশূল দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো প্রায়ই দ্বিতীয় কারণ জাত। জরায়ুর স্বাভাবিক পুষ্টি বা বৃদ্ধির অভাব হলে অথবা বিকৃত রূপে বৃদ্ধি পেলে অথবা কোন কারণবশত স্থানচ্যুত হলে জরায়ু পেশীর অস্বাভাবিক সংকোচন ঘটে ঋতুশূলের সৃষ্টি করে। বস্থি গহ্বরে যে কোন যান্ত্রিক গোলযোগ এই বেদনা সৃষ্টি করে ।

লক্ষণ: ইহাতে রমণীদের মাসিক রজস্রাবকালীন বা রজস্রাব হবার পূর্বে তলপেটে ভীষণ এক প্রকার বেদনা হয় এবং অধিকাংশ রমণীদের ঋতুস্রাব অতি অল্প পরিমাণে হয়ে থাকে। ইহাতে পিঠে, কোমরে, উরুদেশে, ডিম্বকোষে ও জরায়ুতে অত্যন্ত বেদনা থাকে। তলপেটে প্রসব বেদনার ন্যায় বেদনা অনুভব হয়। এই বেদনা ঋতুস্রাবের পূর্বে বা ঋতুস্রাবের সময় আরম্ভ হয় এবং দুই এক দিন কিম্বা ঋতুস্রাব যতদিন থাকে ততদিন পর্যন্ত থেকে শেষে কমে যায়। ইহার সংগে মাথা ধরা, বুক ধড়ফড় করা, অল্প রক্তস্রাব প্রভৃতি লক্ষণ বর্তমান থাকে। এই জাতীয় রোগে আক্রান্ত রমণীদের অনেক সময় সন্তান সন্ততি হয় না । ক্ষুধাহীনতা, বমিভাব, বমি এবং মাথায় যন্ত্রণা ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ লাভ করে।

প্রকারভেদ: ঋতুশূল বা বাধক প্রধানত তিন প্রকারের হতে পারে। যথা(১) মেকানিক্যাল, (২) কনজেসটিভ এবং (৩) নিউরালজিক

মেকানিক্যালইহাতে জরায়ুর কোন প্রকার স্থানচ্যুতি হয় এবং এইজন্য স্বাভাবিক ঋতুস্রাব বাধা পড়ে, ইহাতে কখনো অধিক ব্যথা আবার কখনো কম বেদনার উদ্রেক হয় । ঋতুস্রাব একটু একটু করে হয় এবং ইহাই প্রকৃত বাধক বেদনা। এইরূপ রোগ থাকলে রমণীদের সন্তান প্রায়ই হয় না ।

কন্‌জেসটিভ ইহাতে জারায়ুতে রক্তাধিক্য হয়, জরায়ু ফোলা এবং ওভারাইটিস, পেলভিক সেলুলাইটিস এবং এণ্ডোকার্ডাইটিস প্রভৃতি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ইহাতে ঋতু প্রকাশিত হবার ৪/৫ দিন পূর্বে বেদনা আরম্ভ হয় এবং ঋতুর সময় স্রাব কিছুটা কম হয় এবং বেদনা প্রায় ৭/৮ দিন পর্যন্ত থাকে। ইহাতে ঋতুস্রাব অতি ধীরে ধীরে আরম্ভ হয় । প্রথম ২/৩ দিন অতি অল্প স্রাব হতে হতে পরে অত্যধিক পরিমাণে স্রাব হতে থাকে এবং যখন অধিক পরিমাণে স্রাব হয় তখন প্রবল বেদনার কিছুটা হ্রাস পায়। রক্তস্রাবে ছোট বড় মাঝারি ধরনের চাপ চাপ থাকে। চাপের আকার অনুসারে বেদনার হ্রাসবৃদ্ধি হয়ে থাকে। জরায়ুর গ্রীবাদেশ স্ফীত হয়ে উঠে এবং বেদনান্বিত হয়। জরায়ুতে দপদপকর ব্যথা, জরায়ুর স্রাববহিনির্গমন, অর্শ, জ্বর, প্রভৃতি লক্ষণগুলোও প্রকাশ লাভ করতে পারে। অনেক সময় জরায়ু স্থানভ্রষ্ট হওয়ায় মূত্রথলিতে ও রেকটামে চাপ পড়ে। এই রোগ লক্ষণযুক্ত রোগীর শ্বেত প্রদর স্রাব দেখা দেয় ৷

নিউরালজিকপ্রত্যেকবার ঋতু আরম্ভ হবার ২/১ দিন পূর্ব হতে বেদনার ভাব সৃষ্টি হয়। এই সময় তলপেটের অঞ্চলে প্রবল বেদনা দেখা দেয়, এই বেদনায় জ্বালা পোড়া ও টাটানি ভাব থাকে। মাথার যন্ত্রণা ইহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য লক্ষণ, এছাড়া মলদ্বারের কাছে বস্তি অঞ্চলের হাড়ে, ডিম্বাশয়ে, জরায়ুতে এবং জরায়ু মুখে একপ্রকার বেদনা থাকে । রজস্রাব অতি সামান্য মাত্র হয়, ইহার বেদনা চাপ দিলে, উপুড় হয়ে থাকলে, উত্তাপ দিলে কম হয় এবং অধিক পরিমাণে রজস্রাব হলে বেদনার ভাব কিছুটা কমে যায়। কিন্তু দেখা যায় যে এইসব ক্ষেত্রে রজস্রাব খুব একটা বেশী হয় না, সামান্য পরিমাণে হয় ফলে বেদনা অধিকতরই হতে থাকে। এই জাতীয় রোগে আক্রান্ত রোগী যদি দীর্ঘদিন রোগ ভোগ করে তবে শেষ পর্যন্ত হিষ্টিরিয়া রোগ হতে পারে। এইরূপ রোগের চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে কারণটি নির্ণয় করা দরকার। এইজন্য রোগীর ইতিহাস ভাল করে জানতে হবে। জরায়ুর হর্মোনের কারণে বা ফুলের টুকরো আটকে থাকার দরুণ অথবা আঘাত লাগা বা গনোরিয়া উপদংশের কোন ইতিহাস থাকলে অতি সতর্কতার সংগে ঔষধ নির্বাচন করতে হবে নতুবা আন্দাজে বা আনুমানিকভাবে ঔষধ দিলে কাজ হবে না।

চিকিৎসা:

বেলেডোনা: প্রদাহিত অথবা রক্ত সঞ্চয় জনিত ঋতুশূলে ইহা বিশেষ উপকারী। জরায়ুতে ও ডিম্বাশয়ে রক্ত সঞ্চয়জনিত ঋতুশূলে বস্তিগহ্বরে অতিশয় বেদনা, বেদনার সময় রোগী মনে করে যে পশ্চাৎ দিক হতে উপরের নাড়ীভূড়ি সজোরে ঠেলে যোনিদ্বার দিয়ে বের হয়ে পড়বে। রজস্রাবের একদিন পূর্ব হতে বেদনার উদ্রেক হয়। ঋতুর সময় মলত্যাগকালে অত্যন্ত কষ্ট অনুভব। রোগীর নাক, মুখ, চোখ লালবর্ণ। শিরায় দপদপানি এবং রক্ত প্রধান রমণীদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । মাত্রা৬।

পালসেটিলা: ইহাও প্রদাহিক অথবা রক্তসঞ্চয় জনিত ঋতুশূলে বিশেষ উপকারী। তলপেটে, কোমরে এবং পিঠে কেটে ফেলার ন্যায় অথবা ছিঁড়ে ফেলার ন্যায় তীব্র বেদনা। ক্ষুধাহীনতা, অরুচি, মাথার যন্ত্রণা, যতো ব্যথা ততো শীতবোধ, অনিয়মিত স্রাব, ঋতু কালে উদরাময়, বিলম্বে ঋতুর আবির্ভাব, অতি সামান্য রজস্রাব আবার কখনো কখনো অল্প পরিমাণে চাপ-চাপ কালো বা রক্তবর্ণ স্রাব । শান্ত স্বভাব। মাত্রা৩০ ।

সিপিয়া: প্রদাহিক অথবা রক্তসঞ্চয় জনিত ঋতুশূলে ইহা খুব উপকারী। চোখের চারিধারে কালো চাকা-চাকা দাগের সৃষ্টি, গাত্র হরিদ্রাবর্ণ, প্রাতকালে রোগের বৃদ্ধি পিত্তপ্রধান রমণীদের বাধক বেদনায় ইহা অধিকতর উপযোগী। নিয়মিত সময়ের পূর্বে ঋতুস্রাব, স্বল্পস্রাব, ঋতুর পূর্বে প্রদরস্রাব, গা বমি বমি। মাত্ৰা ৩০ ।

কোনিয়াম: ইহাও প্রদাহিক অথবা রক্তসঞ্চয় জনিত ঋতুশূলে বিশেষ উপকারী। কাষ্ঠবর্ণের অল্প পরিমাণে স্রাব, ঋতুর পূর্বে স্তনবেদনা, স্তন স্ফীত, শক্ত হয়ে ওঠা, প্রস্রাবে কষ্ট, হৃদপিণ্ডে বেদনা, মাথা যন্ত্রণা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। স্তনের বোঁটায় খোঁচা মারা বেদনা । মূত্রত্যাগের পর শ্বেতপ্রদর স্রাব । মাত্রা, ৩০।

 ক্যামোমিলা: ইহা স্নায়বিক ঋতুশূলে বিশেষ উপকারী। মলিন ও কালো বর্ণের চাপচাপ রক্তস্রাব, প্রসব বেদনার ন্যায় বেদনা, ঘন ঘন মূত্রত্যাগের ইচ্ছে, উদরে বেদনা, কোমর হতে সম্মুখের দিকে ঠেলে উঠার ন্যায় বেদনা। বায়ু এবং পিত্তপ্রধান রমণী। উগ্র প্রকৃতির স্ত্রীলোকদের ঋতুশূলে বা বাধক বেদনায় উপকারী। জরায়ুতে চাপবোধ যেন প্রসব হবে, উরুতে ছিড়ে ফেলার ন্যায় বেদনা, উরুতে ও কোমরে অসহ্য বেদনা। রোগী বেদনায় অস্থির হয়ে পড়ে, খিটখিটে স্বভাব ইত্যাদি লক্ষণে ইহা প্রযোজ্য। মাত্রা-৬।

কলোফাইলাম: ইহাও স্নায়বিক ঋতুশূলে বিশেষ উপকারী। তলপেটে সূচীভেদ্য বেদনা এবং এই বেদনা শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। প্রসববৎ বেদনা। প্রচুর পরিমাণে স্রাব, হিষ্টিরিয়া রোগের লক্ষণযুক্ত। উদরের নিম্নভাগে প্রচণ্ড ব্যথা। জরায়ুমুখের অস্বাভাবিক কঠিনতা, ভয়ানক আপেক্ষিক বেদনা, উহা চারিদিকে যেন ছড়িয়ে পড়ে, মিথ্যা প্রসববেদনার সংগে কম্পন ভাব । প্রদরস্রাব তৎসহ কপালের উপর মশা কামড়ের ন্যায় দাগ। ঋতুস্রাব ও প্রদরস্রাব দুই প্রচুর। মাত্রা- Q

সিকেলিকর: স্নায়বিক ঋতুশূলে উপকারী। নিয়মিত সময়ের অনেক পূর্বে দানা দানা, মলিন ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব। তলপেটে অতিশয় বেদনা, মনে হয় যেন পেটের সমস্ত পদার্থ যোনিদ্বার দিয়ে বের হয়ে পড়বে। সর্বাংগে বিশেষ করে হাতে ও পায়ে শীতল ঘাম, নাড়ী ক্ষীণ, মূত্রাশয়ে কেটে ফেলার ন্যায় বেদনা। স্রাব নিসৃত না হওয়ার জন্য তীব্র বেদনা এবং দুর্বলতার অনুভব । মাত্রা, ৩০ শক্তি।

জেলসিমিয়াম: স্নায়বিক ঋতুশূলে এবং জরায়ুতে রক্তসঞ্চয় জনিত আক্ষেপিক বেদনা। যোনিদ্বারে ও উরুতে খিল ধরার ন্যায় বেদনা। প্রথমে উদরের বেদনা আরম্ভ হয়ে ধীরে ধীরে কোমর ও পিঠের উর্ধাংশে ছড়িয়ে পড়ে। ঘাড়েও আক্ষেপিক বেদনা। বেদনার উপশম হলে রোগীর মধ্যে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব দেখা দেয়। ইহার সহিত জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে। কালোফাইলামের সংগে পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করলে অধিক উপকারী। মাত্রা–৩x, শক্তি।

জ্যান্থজাইলাম: স্নায়বিক ঋতুশূলে অধিক উপকারী। লক্ষণযুক্ত অন্যান্য ঔষধে আংশিক উপকার হলে বা ব্যর্থ হলে ইহার বিশেষ প্রয়োজন। তলপেট হতে কুচকি পর্যন্ত বেদনা তৎসহ প্রচুর স্রাব ও জ্বরযুক্ত বাধকবেদনায় ইহা খুব উপকারী। রোগী ভয়ানক বেদনায় কষ্ট পায়, ঋতু অনিয়মিত, অত্যন্ত রজস্রাব, তলপেট হতে কুঁচকী পর্যন্ত বেদনাটিই বেশী। ঔষধটির বিশেষ ক্রিয়া স্নায়ুমণ্ডলে এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর উপর । যন্ত্রণাদায়ক রজস্রাব। ঋতুস্রাব নিয়মিত সময়ের পূর্বে এবং বেদনাযুক্ত। ডিম্বাশয়ে স্নায়ুশূল তৎসহ কুঁচকি ও তলপেটে ব্যথা। বিশেষ করে বাম পার্শ্বে বেদনা বেশী। এই বেদনা উরুদেশ পর্যন্ত নেমে আসে এবং জননইন্দ্রিয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। স্নায়ুশূল সহ রজকষ্ট তৎসহ মাথায় স্নায়বিক বেদনা। ঋতুস্রাব ঘন, প্রায় কালো বর্ণ। ভ্যাদাল ব্যথা। ঋতুকালে প্রদরস্রাব। স্নায়বিক প্রকৃতির রোগী, কৃশ, জীর্ণশীর্ণ, যাদের পরিপাক শক্তি কম, রাত্রে ঘুম হয় না, মাথার পশ্চাৎদিকে বেদনার অনুভব ইত্যাদি লক্ষণে ইহা বিশেষ উপকারী । মাত্ৰা Q

এপিস: যোনিপীঠের স্ফীত, শীতল জলে উপশম। বেদনা ও সূচ ফুটানো জ্বালা। ডিম্বাশয় প্রদাহ, ডানদিকেই অধিক। ঋতুবন্ধ হয়ে যুবতীদের মস্তক ও মস্তিষ্ক আক্রান্ত! রজকষ্ট সহ ডিম্বাশয়ে বেদনা। অতিরজ, তলপেট ভারী। ডিম্বকোষে অর্বুদ, জরায়ু প্রদাহ তৎসহ হুলফুটানো ব্যথা। তলপেটে ও জরায়ু স্থানে স্পর্শকাতরতা। প্রসবের ন্যায় বেদনা যেন এখনি ঋতুস্রাব দেখা দিবে। রোগী বেদনায় ছটফট করে। মূত্রের পরিমাণ সামান্য। হাতপায়ে শোথবৎ স্ফীত। মাত্রা–৩০।

সিমিসিফিউগা: ঋতুর পূর্বে মাথায় যন্ত্রণা। ঋতুকালে প্রসব বেদনার ন্যায় উদরে বেদনা। তলপেট, কুচকিতে, পিঠে তীব্র বেদনার অনুভূতি। মলিনবর্ণের অল্প বা অধিক পরিমাণে থান থান রজস্রাব। অল্প বা প্রচুর পরিমাণে রক্তস্রাব, বমি, স্তনের নিচে বেদনা। ইহা বাধক বেদনার অতি উৎকৃষ্ট ঔষধ। পালসটিলায় যদি উপকার না হয় তবে ইহা প্রযোজ্য। উরুতে ও কোমরে অধিক ব্যথা । মাত্রা–৩x

ক্যাকটাস: বেদনার জন্য রোগী চিৎকার করে কাঁদে, অতিশয় অবসন্নতা। জরায়ু ও ডিম্বকোষ প্রদেশে সংকোচ ভাব। রজকষ্ট সহ জরায়ু ও ডিম্বকোষে দপদপকর বেদনা। যোনিপ্রদেশের প্রদাহ। ঋতুস্রাব সময়ের আগেই হয়। রক্ত কালো, পীচের ন্যায়, শুলে বন্ধ হয় তৎসহ হৃদ লক্ষণ বর্তমান। রক্তস্রাব, সংকোচনবোধ, নির্দিষ্ট সময় রোগ আক্রমণ, আক্ষেপকর বেদনা । মাত্রাQ।

ভাইবার্নাম: ঋতুকালে হঠাৎ বেদনা আরম্ভ হয়ে ৮/১০ ঘন্টা পর্যন্ত থাকে। জরায়ুতে তীব্র বেদনা, পরে সমস্ত পেটে ঐ বেদনা প্রসার লাভ করে। আক্ষেপযুক্ত ঋতুশূলের উৎকৃষ্ট ঔষধ। ঋতুর পূর্বে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা। ঋতুর সময় গা বমি বমি, শ্বাসকষ্ট এবং প্রচুর পরিমাণে ঋতুস্রাব । মাত্রা–১x, x শক্তি

বোরাক্স: জরায়ুতে আক্ষেপ, ঋতুশূল, যদি বন্ধ্যাত্ব ভাব থাকে তবে ইহা অধিক উপকারী। পেটের বামদিকে অধিকতর বেদনা। এই কাঁধ পর্যন্ত উঠে আবার ডিম্বাশয় পর্যন্ত নামে । জরায়ু হতে ঝিল্লী নিঃসরণ হয়। পেটের ডান দিকে অধিক বেদনা । মাত্রাx বিচূর্ণ উপযোগী।

ক্যালকেরিয়া কার্ব: ঋতুস্রাবের সময় পেট কেটে ফেলার ন্যায় বেদনা। এবং ঋতুস্রাবের পূর্বে স্তনে টাটানি, স্তন স্ফীত, মাথা ধরা, শ্বেত প্রদর স্রাব, পায়ের পাতা ঠাণ্ডা। ঋতুস্রাবের পূর্বে মাথায় যন্ত্রণা, শীত শীত ভাব এবং প্রদর স্রাব। ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে, প্রচুর এবং দীর্ঘদিন স্থায়ী । মাত্রাx চূর্ণ ।

লিলিয়াম: তলপেটে বেদনা এবং পা পর্যন্ত বিস্তৃত। তলপেটে খোঁচামারা ব্যথা। প্রসব বেদনার ন্যায় জরায়ুতে বেদনা, স্তনে বেদনা। ঋতু নিয়মিত সময়ের পূর্বে, সামান্য মাত্র, কালো, চাপ চাপ, দুর্গন্ধযুক্ত রক্তস্রাব, স্রাব কেবল মাত্র চলাফেরা করার সময়। নিচের দিকে ঠেলামারা বেদনা । বিশেষ করে ঋতুস্রাব বন্ধ কালে। জরায়ুতে রক্ত সঞ্চয় । মাত্রা–৩০।

এব্রোমা আগস্টা: অনিয়মিত ঋতুস্রাবের ২/১ দিন পূর্বে তলপেটে অত্যন্ত বেদনা, কালো চাপ চাপ রক্তস্রাব, মাথা ঘোরা। অত্যন্ত কষ্টদায়ক ঋতুশূল। ইহা যথারীতি ব্যবহার করলে জরায়ু ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। ইহা অনিয়মিত ঋতুস্রাবে সাহায্য করে ইহাকে নিয়মিত করে। বাধকজনিত বন্ধ্যাত্ব। ইহা জরায়ুর বলবর্ধক একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। এই ঔষধটি ঋতুশূল বা বাধক বেদনার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। তবে ইহা নিয়মিত মাত্রায় যথারীতি ব্যবহার করতে হবে। মাত্রা–৪, ৫/১০ ফোঁটা।

ককুলাস: মধ্যে মধ্যে অল্প স্রাব, পিঠে অবশতার ভাব, পেট ফাঁপ, নড়া চড়া করলে পেটে ব্যথা লাগে। পেট কামড়ানির ন্যায় পেটে বেদনা। বুকে চাপ বোধ এবং শ্বাসকষ্ট, জরায়ুর আক্ষেপ, অতিমাত্রায় কালো রক্তস্রাব অথবা শ্বেত প্রদর । অত্যন্ত মাথা যন্ত্রণা ও মাথা ঘোরে। পেট ফাঁপ। সময় সময় মূৰ্চ্ছা ও বমিভাব। দুই ঋতুর মধ্যবর্তীকালে অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত প্রদর স্রাব সজোরে নির্গত হয়। ঋতু নিয়মিত সময়ের পূর্বে, স্রাবে চাপ চাপ রক্ত তৎসহ আক্ষেপজনক শূলবেদনা । অত্যন্ত দুর্বলকর প্রদরস্রাব । মাত্রা, ৩০ শক্তি।

হেলোনিয়াস: বন্ধ্যা স্ত্রীলোক, অত্যন্ত রজস্রাব, জরায়ু হতে পিঠ পর্যন্ত বেদনা এবং অত্যন্ত দুর্বলতা। জরায়ুতে অতিশয় বেদনা, জানুতে ও পিঠে অবিরাম বেদনা, কালো সুতার ন্যায় স্রাব। ত্রিকাস্থিতে টেনে ধরার ন্যায় বেদনা তৎসহ জরায়ু ভ্রংশ বিশেষ করে গর্ভস্রাবের পর। জরায়ু স্থানে চাপবোধ ও বেদনা। জরায়ু সম্পর্কে সদা সচেতন থাকে। ঋতুস্রাব অতি সত্ত্বর ও অতি প্রচুর । প্রদর স্রাব । স্তনদ্বয় স্ফীত, স্তনবৃন্ত বেদনার্ত ও স্পর্শকাতর। ইন্দ্রিয় স্থান উষ্ণ, রক্তবর্ণ, স্ফীত, জ্বালাকর ও চুলকানিযুক্ত। গর্ভকালে প্রদর স্রাব। ত্রিকাস্থি ও বস্তি প্রদেশে দুর্বলতা, টেনে ধরার ন্যায় যন্ত্রণা, চাপবোধ তৎসহ অবসাদ ও আলস্য ঔষধটির বিশেষ লক্ষণ। দুর্বলতা হেতু জরায়ু নির্গমন। সর্বদাই ক্লান্ত ও পৃষ্ঠবেদনাগ্রস্ত রমণীদের পক্ষে ইহা বিশেষ উপকারী। মাত্রা-৪, ৬।

কলিনসোনিয়া: স্রাবসহ খণ্ড খণ্ড ঝিল্লীবৎ পদার্থ নিঃসরণ এবং তসহ দারুণ বেদনা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের ভাব। রজকষ্ট, যোনিদ্বারের চুলকানি, নাড়ী বের হয়ে পড়া, জননাংগ স্ফীত ও রক্তবর্ণ, বসতে গেলে বেদনা। কোষ্ঠকাঠিন্যের সংগে ঝিল্লীযুক্ত রজকষ্ট। চুলকানি। মাসিক ঋতুর পর উরুদেশে ঠাণ্ডাবোধ করে। ভগৌষ্ঠ ও ভগাংগের স্ফীতভাব এবং বেদনাবোধ । বস্তি ও যকৃত প্রদেশে রক্ত সঞ্চয়হেতু অর্শরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য বিশেষ করে রমণীদের ক্ষেত্রে। ধমণীসমূহের প্রসারণ ক্রিয়া ব্যাহত পেশীতন্তুর শক্তিহীনতা। হৃদরোগ হতে পেরে। শিরাসমূহের স্ফীতি । একবার কোষ্ঠকাঠিন্য আবার উদরাময় । মাত্রা , ৬ শক্তি।

ভিরেট্রাম এল্বাম: শূলবেদনা সহ বমির ভাব, মাথায় যন্ত্রণা, হাত পা নাক ইত্যাদি শীতল এবং কপালে শীতল ঘাম। গভীর অবসন্নতা ও মূৰ্চ্ছা। নিয়মিত সময়ের পূর্বে ঋতু প্রকাশ, স্রাব প্রচুর এবং অবসাদকর। কষ্টকর রজস্রাব তৎসহ সর্বাগীন শীতলতা, ভেদ ঠাণ্ডা ঘাম । সামান্য পরিশ্রমেই রোগীর মধ্যে মূৰ্চ্ছাভাব। ঋতু প্রকাশের পূর্বে কাম উন্মাদনার ভাব। শীতল ঘর্ম, হাতপায়ের চর্ম কোঁকড়িয়ে আসে কপালে শীতল ঘর্ম, মাথার যন্ত্রণা সহ বমি ও বমিভাব । হাতপায়ে খিল ধরা। মাত্রা–৩০।

অশোকা: এই ঔষধটি স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের উপর বিশেষ ভাল কাজ করে । ইহা স্বল্প ঋতু বা প্রচুর ঋতু উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়। বিলম্বিত ও অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ঋতুশূল রজরোধ, রজ নির্গমনের পূর্বে ডিম্বকোষদ্বয়ের বেদনা। রজোবাহূল্য মূত্রাধারের উত্তেজনা, প্রদরস্রাব। মেরুদণ্ডে বেদনা এবং উহা তলপেট, উরুদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে মিষ্ট ও টক দ্রব্য খেতে চায়, পিপাসা, বমিভাব। মাত্রা  

বিঃ দ্রঃযদি মাসিক ঋতুর সময় জরায়ুর মধ্যে প্রচণ্ড যন্ত্রণা, রক্তস্রাব সামান্য পরিমাণ হলে এবং ডিম্বাশয় দুটির কনজেশান হলে ভাইবার নাম অপু ০ ১০/১৫ ফোঁটা দু'ঘণ্টা অন্তর ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ভাইবারনাম অপুঃ ৪ দু ড্রাম এবং জেলসিমিয়াম ৪, ২০ ফোঁটা একত্রে চার আঃ জলে মিশিয়ে এক চামচ করে ১৫ মিঃ অন্তর ব্যবহার করলে উপকার হয়! তাছাড়া মাসিকের অত্যন্ত বেদনায় ও যন্ত্রণায় ভাইবারনাম ৪ অথবা ভার্বানাম প্রুঃ ৪, ২০/২৫ ফোঁটা করে রোজ চারবার করে দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময় ব্যবহার করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। ইহাতে ঋতুশূল বা বার্ধক্য বেদনা কমে যায়। যদি মাসিকের সময় যন্ত্রণা খামচানো বা মোচড়ানোর মত হয় কিন্তু সামনের দিকে ঝুকলে বা বিছানায় শুলে যন্ত্রণা বাড়ে এবং দাঁড়ালে বা পেছনের দিকে বাঁকলে যন্ত্রণা কমে তবে ডায়াসকোরিয়া ৪ এক ড্রাম চার আঃ জলে মিশিয়ে এক চামচ করে ১০/১৫ মিঃ অন্তর ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। যদি ঋতুশূলের সংগে দপদপ করে মাথায় যন্ত্রণা বিশেষ করে থলথলে মোটা-সোটা যুবতী বা মহিলাদের মাসিক স্রাব কম হলে ভিরেট্রামভিরিডি ১x, ৬/৭ ফোঁটা করে প্রত্যহ চার বার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায় ।

বায়োকেমিক চিকিৎসা:

ম্যাগনেসিয়া ফস: ঋতুকালে সাধারণ বেদনা যন্ত্রণা, এবং কষ্টকর ঋতুস্রাব। ঋতুর পূর্বে বেদনা। ঋতুশূল, স্নায়বিক ও কামড়ানি বেদনাবোধ । চলাফেরায় বৃদ্ধি এবং গরমে উপশম ইত্যাদি লক্ষণে ইহা প্রযোজ্য । মাত্রাx, ১২x শক্তি।

ক্যালকেরিয়া ফস: মেয়েরা যৌবনকালে সতর্ক না হলে যে বাধক বেদনা দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য। ঋতুকালে প্রসব বেদনার ন্যায় বেদনা তৎসহ পিঠে বেদনা, মাথা ঘোরা, কাম উত্তেজনা ইত্যাদি লক্ষণে এই ঔষধ বিশেষ উপকারী। মাত্রা ৬x দুটি করে ট্যাবলেট।

আনুষংগিক ব্যবস্থা ও পথ্য: অল্প রক্তস্রাব বশতঃ উদরে অত্যন্ত বেদনা থাকলে গরম শেঁক দিলে উপকার হয়। গরম জলের ব্যাগ দেয়া যায় বেদনা কালীন সময় গমের ভূষির শেঁক পেটে ও কোমরে দিলে বিশেষ উপশম পাওয়া যায়। আহারাদি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত সময় স্নানাহার করতে হবে। ঝাল, টক, উগ্র মশলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। রাত জাগরণ আদৌ হিতকর নয়। এই জাতীয় রোগীর যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাব না থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে কারণ এমত অবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে রোগীর যন্ত্রণার মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং নূতন উপসর্গের সৃষ্টি করে ইহাতে রোগের জটিলতা বেড়ে যায় । প্রদাহের উপকার না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। এমন কি রোগ থাকাকালীন বিছানা থেকে উঠতে দেয়া উচিত নয়। পথ্য হিসাবে দুধ, সাবু, বার্লি, ফলের রস ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। যে কোন তরল লঘু জাতীয় পুষ্টিকর খাদ্য রোগীর পক্ষে উপকারী। আনুষংগিক ও পথ্যের ব্যবহার ভাল না হলে শুধু ঔষধ খাওয়ালে উপকার হয় না । অতএব ইহাও গুরুত্বপূর্ণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

Ads

Ads